চারণ কবি ও পথ প্রদর্শক
বিজন বেপারী
মুকুন্দ দাস স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু স্বদেশী বিপ্লবাত্মক গান ও নাটক রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন স্বদেশী যাত্রার প্রবর্তক। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন চারণকবি ছিলেন।
তার পিতার নাম গুরুদয়াল দে, মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী। তার বাবার দেয়া নাম ছিল যজ্ঞেশ্বর দে। তার জন্মের পরে ওই গ্রাম পদ্মানদীতে তলিয়ে গেলে তারা সপরিবারে গুরুদয়ালের চাকরিস্থল বরিশাল শহরে চলে আসেন। বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু হয় মুকুন্দ দাসের।
বরিশালে বৈষ্ণব সন্ন্যাসী রামানন্দ অবধূত যজ্ঞেশ্বরের গলায় হরিসংকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে দীক্ষা দিয়ে তার নাম রাখেন মুকুন্দদাস। উনিশ বছরের বয়সের মধ্যে মুকুন্দ দাস সাধন-সঙ্গীত নামে একশোটি গান সমৃদ্ধ বই রচনা করেন। বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় লিখতেন। যাত্রাগানে বরিশাল মাতিয়ে রাখতেন।
মুকুন্দ দাস স্বদেশি ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু স্বদেশি বিপ্লবাত্মক গান ও নাটক রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন স্বদেশি যাত্রার প্রবর্তক। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন কবিয়াল ছিলেন।
চারণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি বরিশালের কাশীপুর কালীমন্দিরের জায়গা কেনেন, যা এখন বরিশাল নগরীতে ঢোকার মুখে নথুলাবাদ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন চারণকবি মুকুন্দ দাসের কালীবাড়ি। সেই সময়ের মোট জায়গা ছিল ৮৭ শতাংশ, এখন আছে মাত্র ১৯ শতাংশ। বাকিটা বেহাত হয়ে গেছে। বর্তমান স্থানটুকু ঘিরে আছে ছাত্রাবাস, লাইব্রেরি, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং পুজামন্দির।
বরিশালের অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে মুকুন্দদাস রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। তার আগ্রহে মুকুন্দদাস মাতৃপূজা নামে একটি নাটক রচনা করেন। দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীতে নবগ্রামে এই নাটকের প্রথম প্রকাশ্য যাত্রাভিনয় হয়। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় মুকুন্দ দাস একের পর এক গান, কবিতা ও নাটক রচনা করে বাঙালির জাতীয় জীবনে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করেন।
এরপর ব্রিটিশ সরকার রাজদ্রোহের অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করেন ও বিচারে তাকে দিল্লী জেলে আড়াই বছর সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। মাতৃপূজা নাটকটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে। কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথাক্রমে বাংলা মায়ের দামাল ছেলে চারণ-সম্রাট মুকুন্দ উপাধিতে ও সন্তান আখ্যায় ভূষিত করেন।
মুকুন্দ দাস কারাবসে থাকাকালীন তার স্ত্রী সুভাষিণী দেবীর মৃত্যু ঘটে। মুক্তিলাভের পর চিত্তরঞ্জন দাশ ও সুভাষচন্দ্র বসু তাকে সান্ত্বনা দেন ও উদ্বুদ্ধ করেন যার ফলে তিনি পুনরায় রচনায় মনোনিবেশ করেন। মুকুন্দদাসের রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মাতৃপূজা, সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী, কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ ইত্যাদি।
0 Comments