আজ বিশ্ব বেতার দিবস
জিল্লুর রহমান জিল্লু, বরিশাল।
আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ব্যাপক আনন্দ উৎসরের মধ্য দিয়ে সাড়া বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ১৩তম বিশ্ব বেতার দিবস। এবারের বিশ্ব বেতার দিবসের প্রতিপদ্য হচ্ছে ‘‘শতাব্দী জুড়ে তথ্য, বিনোদন ও শিক্ষা বিস্তারে বেতার’’। তথ্য, শিক্ষা ও বিনোদনের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের একমাত্র ইলেক্ট্রনিক পুরোনো সহজলভ্য, সবখানে সহজে হাতের নাগালে পাওয়া গণমাধ্যম বেতার বা রেডিও।
তারবিহীন যোগাযোগের একটি শক্তিশালি মাধ্যম হচ্ছে বেতার। তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ ব্যবহার করে তথ্য আদান প্রদান করা হয়। বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো মার্কোনিকে রেডিও যন্ত্র আবিষ্কারের জনক বলা হয়। রেডিও তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রথম প্রমাণ করেছিলেন জর্মান পদার্থবিদ হেনরিখ হার্টজ ১১ নভেম্বর, ১৮৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়। প্রথম বাণিজ্যিক রেডিও সম্প্রচার শুরু হয় ২ নভেম্বর, ১৯২০ সালে হাডিংকক্সের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। বিশ্বের জনপ্রিয় বেতার গণমাধ্যম ছিলো ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন বিবিসি যা দীর্ঘ ৮১ বছর পরে বন্ধ হয়ে যায়।। বর্তমান বিশ্বে ভয়েস অফ আমেরিকার ভিওএ ও ইরানের রেডিও তেহরান বেশ জনপ্রিয় গণমাধ্যম হিসেবে চলছে। বিশ্বের অন্যান্য রেতারের মতো বাংলাদেশ বেতারেরও রয়েছে সুদীর্ঘ পথচলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডে বাংলাদেশ বেতারের জন্ম হলেও শুরুতে এর নাম ছিল ‘ঢাকা ধ্বনি বিস্তার কেন্দ্র’ কয়েক বার বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তণ হয়ে আজকের ‘বাংলাদেশ বেতার’ নামে রুপান্তিত হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার আজ ৮৪ বছরে পদার্পণ করেছে। জাতিসংঘ রেডিও প্রতিষ্ঠার দিন ১৯৪৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারীকে ‘বিশ্ব বেতার দিবস’ হিসেবে নির্ধারিত হয়। ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর সাধারণ সভায় ১৩ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব বেতার দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১২ সালে থেকে প্রতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব বেতার দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব বেতার দিবস ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য একটি বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। বিশ্ব বেতার দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য বেতার মাধ্যমের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, মানুষকে বেতারের মাধ্যমে তথ্য প্রদান, দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যমের মধ্যে আন্তঃসংযোগ জোরদার করা। বাংলাদেশ বেতার বিশ্ব বেতারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে তথ্য ও সংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ এই দিনটি যথাযথ ভাবে গুরুত্ব সহকারে উৎযাপন করে থাকে। বাংলাদেশ বেতার কর্মী এবং বেতার শ্রোতাদের জন্য আর একটি বাড়তি উৎসবের বিশ্ব বেতার দিবস। ডিজিটার বাংলাদেশ আদলে বাংলাদেশ বেতারকে যুগউপযোগী করার পাশাপাশি বেতারের নানামূখী কার্যক্রম গ্রহণের কারনে বেতারে বিপুল শ্রোতা সমাগম ঘঠেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বীনির্মানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ অন্যতম সহযোদ্ধা ‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ থেকে শুরু করে আজঅবধী বাংলাদেশ বেতার তথ্য, শিক্ষা ও বিনোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বঙ্গ বন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করে `স্বাধীন বাংলা বেতার’ অবিস্মরনীয় ভূমিকা পালন করে যা চিরস্মরনীয় হয়ে আছে। বাংলাদেশ বেতারের সকল কার্যক্রম, আলোকচিত্র মানুষের হাতে হাতে পৌছেঁ দিতে বাংলাদেশ বেতারের মূখপাত্র দ্বি-মাসিক পত্রিকা ‘বেতার বাংলা’ গুরুত্তপূর্ন ভূমিকা পালন করে। সবচেয়ে সহজলভ্য, ভালো শ্রবণমান সম্পন্ন, সহজে প্রাপ্যতার গণমাধ্যম হচ্ছে বাংলাদেশ বেতার। এক সময় বাংলাদেশ বেতার ছিল বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের একমাত্র প্রিয় বিনোদন মাধ্যম। বর্তমানেও তুমুল জনপ্রিয় গণমাধ্যম হচ্ছে বাংলাদেশ বেতার। বিশেষ করে তরুন সমাজ বেতারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সমাজের নানান কুসংস্কার দূর করে জনকল্যাণ মূলক সামাজিক কার্যক্রম পালন করে। শ্রোতা ক্লাব সমূহ অসহায় মানুষের পাশে দাড়ায়, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, দুর্যোগকালীন সময়ে সহযোগীতা করা, শীতের দিনে শীতবস্র বিতরণ, টিকাদান কর্মসূচী পালনসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে থাকে। বেতারে ডাকযোগে, ই-মেইলে, মোবাইলে কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে যেকোন সময় যেকোন মতামত শ্রোতারা পাঠাতে পারে।
বাংলাদেশ বেতার দেশেরগন্ডি পেরিয়ে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। শ্রোতারা প্রতিদিন আগ্রহ সহকারে বেতার শোনে এবং মতামত জানায় । ছন্দে ছন্দে বলা যায়,
‘‘বেতার শোনে জ্ঞানী গুনী,
শোনে আম জনতা।
দিনে দিনে শিখছে তারা,
শিষ্টাচার আর সভ্যতা।’’
বেতার মানবজাতিকে তথ্য প্রদান করে, পরিবর্তণ, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করে সকল মানুষকে একটি প্লাট ফর্মে একভূত করে। বেতার মানুষের পুরোন ধ্যানধারণা দূর করে সংস্কারের সাথে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করে। নতুন পথের আলোকবর্তিকা বাংলাদেশ বেতার। অভীষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে প্রতি সেশনে নতুন নতুন অনুষ্ঠান সংযোজনের মাধ্যমে মানসম্মত অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশ বেতার। বাংলাদেশ বেতার, কেন্দ্রীয় বেতার ঢাকা, ঢাকা-ক, ঢাকা-খ, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, কক্সবাজার, রাঙামাটি, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, কেন্দ্রীয়, আঞ্চলিক, উপকেন্দ্র সমূহ, বর্হিবিশ্ব কার্যক্রমসহ, মধ্যম তরঙ্গ ও এফএমএ একযোগে ২৭৭ ঘাণ্টার বেশি ধরে অনুষ্ঠান প্রচার করে বাংলাদেশে বেতার। বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানের মাধ্যেমে মানুষকে বেতারের সাথে সম্পৃক্তার সাথে সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে। বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার অনলাইনের সাথে যুক্ত হয়েছে, প্রতিটি কার্যক্রম ফেসবুকে যুক্ত করে বেতার তথ্য, শিক্ষা, বিনোদন, নৈতিকতা শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংবাদ, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি, আইসিটি, গণশিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, খেলাধূলা, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম, নারী ও শিশু উন্নয়ন, বাল্য বিবাহরোধ, কুসংস্কার দূরীকরণ, পরিবেশ রক্ষা, জঙ্গী তৎপরতা রোধ, মাদক এর কুফল, গুজব রটানো, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে, দুর্যোগের সময় মানুষকে নিরাপদে অবস্থানের আহ্বানের সাথে দুর্যোগকালীন করনীয় সম্পর্কে সচেতন করে, ট্রাফিক সম্পর্কে সচেতন, ভেজাল, দুর্নীতিসহ সমাজের নানান অসংগতির দূর করার জন্য বাংলাদেশ বেতার প্রতিনিয়ত মানুষকে সচেতন করে আসছে। বাংলাদেশ বেতাররে এই চলামান গতি স্বাধীনতার চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী জাতিকে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে এই চাওয়া প্রতিটি বেতার ভক্ত নাগরিকের। বাংলাদেশ বেতার সবসময় সবার সাথে আছে এবং থাকবে এই প্রত্যাশা সবার।
0 Comments